লালবাগ কেল্লা

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর একটি দেশ ।বাংলাদেশের রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রায় দুই হাজার বছরের । মুসলিম প্রধান এই দেশে নেই কোন জাতিগত ভেদাভেদ। রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খিষ্ট্রান ও অন্যান্য ধর্মালম্বীর জাতি। ব্রিট্রিস দ্বারা শাসিত হয়েছে এই বাংলা, তাই অতীতের একটি সুবর্ণ ইতিহাস রয়েছে রাজধানী ঢাকা সহ বাংলাদেশের অন্যান্য সব জেলা গুলোতেও।

লালবাগ কেল্লা

বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নির্দশন । মোঘল আমলে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আরা নানা রংগের মিশ্রনে তৈরী করা এই লালবাগ কেল্লা। বাংলাদেশের আর কোন ঐতিহাসিক নির্দশনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায় নাই । প্রতিদিন দেশি-বিশেদী দর্শনার্থীর পদচারনায় মুখর থাকে এই লালবাগ কেল্লা।

লালবাগ কেল্লার নামকরন করা হয়েছিল এলাকার উপর ভিত্তি করেই। নামকরনে অনেকেই হয়তো ভেবে থাকে যে, এটি লালবাগে স্থাপিত হওয়ার কারনেই হয়তো এর নাম লালবাগ হয়েছে। তবে প্রথম দিকে এর নাম সম্পূর্ন ভিন্ন ছিল । শুরুর দিক থেকেই এই কেল্লার নাম ছিল “কেল্লা আওরঙ্গবাদ” ।

কেল্লার ইতিহাসঃ

লালবাগ কেল্লার নির্মান কাজ শুরু হয় ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময়ে মুঘল সম্রাট আজম শাহ এর নির্মান কাজ শুরু করেন। তবে আজম শাহ খুব কম সময়ের জন্যই মুঘল সম্রাট ছিলেন। তবুও তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই অসাধারন এই নির্মান কাজটি শুরু করেন। উল্লখ্য আজম শাহ ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর পুত্র আর সম্রাট শাহ জাহানের নাতি, যিনি তাজমহল তৈরির জন্যে বিশ্ব মহলে ব্যাপক সমাদৃত।

এই দুর্গ নির্মান কাজ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পর মারাঠা বিদ্রোহ শুরু হয়। তখন তার পিতার ডাকে বিদ্রোহ দমনের জন্য তাকে দিল্লিতে ফেরত যেতে হয়। সম্রাট আজম শাহ যাওয়ার পর দুর্গ নির্মানের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। সেই সময় সংশয় হয় যে, এই দুর্গ নির্মান কাজ আদৌ সম্পন্ন হবে কিনা। কিন্তু পরবর্তীতে সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে তৎকালীন নবাব শায়েস্তা খা কাজ থেমে যাওয়ার প্রায় এক বছর পরে পুনরায় লালবাগ কেল্লার নির্মান কাজ শুরু করে দেন।

তবে শায়েস্তা খা পুনরায় কাজ শুরু করার প্রায় চার বছর পর আবার দুর্গ নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়, এরাপর আর দুর্গটির নির্মান কাজ শুরু করা হয়নি। পরি বিবির মৃত্যুর পর দুর্গটি সর্ম্পকে বিদ্রুপ ধারনা জন্ম নেয়, সবাই দুর্গটিকে অপয়া আখ্যা দেয়। পরি বিবির মৃত্যুর পর তাকে দূর্গের মাঝেই সমাহিত করা হয়। এরপর থেকেই এটিতে পরি বিবির সমাধি নামে আখ্যায়িত করা হয়। পরি বিবির সমাধিতে যে গম্বুজটি দেখা যায়, তা এক সময় স্বর্ণ খতিচ ছিল, যা এখন আর নেই। গম্বুজটি কে তামার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

এই ভবনটি মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরীবিবির সমাধি নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এই একটি মাত্র ইমারতে মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রং এর ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছে। কক্ষগুলির ছাদ কষ্টি পাথরে তৈরি। মূল সমাধি সৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের উপরের কৃত্রিম গম্বুজটি তামার পাত দিয়ে আচ্ছাদিত। ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের পুর্বে নির্মিত। তবে এখানে পরীবিবির মরদেহ বর্তমানে নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরী বিবির সমাধি। সচরাচর টেলিভিশনে, খবরের কাগজে, ম্যাগাজিনে লালবাগ কেল্লার যে ছবিটি দেখা যায় সেটা মূলতঃ পরী বিবির সমাধির ছবি।

কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-

১। কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা

২। পরীবিবির সমাধি

৩। উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ

আজম শাহ দিল্লি চলে যাওয়ার আগেই তিনি কেল্লাতে একটি মসজিদ তৈরি করে গিয়েছিলেন।তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি যে কারো দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। মসজিদটিতে জামায়াতে নামায আদায় করা হয়। ঢাকায় এতো পুরনো মসজিদ খুব কমই আছে।

লালবাগ কেল্লাতে এখানে ওখানে বেশ কয়েকটি ফোয়ারার দেখা মিলবে, যা শুধুমাত্র কোনো বিশেষ দিনে চালু থাকে (যেমনঃ ঈদ)। কেল্লাতে সুরঙ্গ পথ ও আছে, লোক মুখে শোনা যায় যে আগে নাকি সুরঙ্গ পথগুলোতে যাওয়া যেতো, তবে এখন আর যাওয়া যায়না। উল্লেখ্য সুরঙ্গ পথ এ যাওয়ার কথাটি নিতান্তই শোনা কথা, এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

লালবাগ কেল্লায় সর্বসাধারণের দেখার জন্যে একটি জাদুঘর রয়েছে, যা পূর্বে নবাব শায়েস্তা খাঁ এর বাসভবন ছিল আর এখান থেকেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। জাদুঘরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। মুঘল আমলের বিভিন্ন হাতে আঁকা ছবির দেখা মিলবে সেখানে, যেগুলো দেখলে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। শায়েস্তা খাঁ এর ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্র সেখানে সযত্নে রয়েছে। তাছাড়া তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সেসময়কার প্রচলিত মুদ্রা ইত্যাদিও রয়েছে।

লালবাগ কেল্লা দর্শনের জন্য অবশ্যই আপনাকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। জনপ্রতি টিকেট এর দাম দশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য একশত টাকা করে।

বন্ধ এবং খোলার সময়ঃ

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সহ সকল সরকারি ছুটির দিন লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে।

সংগ্রহীত

Post a Comment

Previous Post Next Post